যে কোন কুণ্ডুলীর অষ্টম ঘর থেকে সেই কুণ্ডুলী ধারকের নেগেটিভ হিসাবে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা,মৃত্যু বা মৃত্যুতুল্য কষ্টের বিচার করা হয় ।আর পজেটিভ হিসাবে গুপ্তবিদ্যা,গুপ্তধন,গুপ্তরহস্য,অনুসন্ধান বা খোঁজ,শ্বশুরবাড়ি বা জীবনসঙ্গীর ধন-পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের বিচার করা হয় । আমরা জানি যে সপ্তম ঘর থেকে জীবনসঙ্গী বা পার্টনার,ব্যবসা-বাণিজ্যের বিচার করা হয়ে থাকে।সেই সঙ্গে সপ্তম ঘর থেকে আমাদের সামনের সেই সব ব্যক্তিরও বিচার করা হয়ে থাকে,যাদের সাথে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রকারের আদান:প্রদান করি ।আর অষ্টম ঘর থেকে সেই সব ব্যক্তিরও ধন-পরিবার,আত্মীয়-স্বজনের বিচার করা হয়,যাদের সাথে আমরা দৈনন্দিন জীবনের আদান-প্রদান বা লেনদেন করি । যেভাবে লগ্নের বৈশিষ্ট্য ভালো-মন্দ বজায় থাকা নির্ভর করে লগ্নের বিপরীত ঘরের সাথে ভালো-মন্দ সম্পর্ক বজায় রাখার উপর,তেমনি আমাদের দ্বিতীয় ঘরের বা ধন-পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরের ভালো-মন্দ বজায় থাকা নির্ভর করে আমাদের অষ্টম ঘরের তথা আমাদের জীবনসঙ্গীর,বা পার্টনারের বা সামনের ব্যক্তির(যাদের সাথে আমরা দৈনন্দিন জীবনের লে
কেতু ! এমন একটি নাম,যে নাম শুনলে সবার মধ্যেই কম বেশি ভয়ের বাতাবরণ কাজ করে।সৌর জগতে রাহু এবং কেতুর কোন অস্তিত্ব নেই । বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহু-কেতুকে ছায়া গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে ।
পৌরাণিক কথা অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু যখন দেবতাদের মধ্যে অমৃত বণ্টন করছিলেন,তখন স্বরভানু নামের রাক্ষস দেবতা সেজে চন্দ্র এবং সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে অমৃত বণ্টনকালীন সময়ে দেবতা সেজে অমৃত খেয়ে নিয়েছিলেন ।ভগবান বিষ্ণুকে যখন এই কথাটি চন্দ্র এবং সূর্য জানান,তখন ভগবান বিষ্ণু উনার সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে সেই স্বরভানু নামের রাক্ষসের গলা কেটে দেন । কিন্তু গলা কাটার আগেই স্বরভানু অমৃত খেয়ে ফেলায় উনি ওমর হয়ে যান শরীরের দুই টুকরো রূপে ।মাথা থেকে গলা পর্যন্ত একভাগ,যাকে আমরা রাহু নামে জানি এবং গলা থেকে পা পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাগ যাকে আমরা কেতু নামে জানি ।
সূর্য ও চন্দ্র দেবতা ভগবান বিষ্ণুকে সেই সময় স্বরভানুর দেবরূপ ধারন করে অমৃত পান করার ঘটনাটা জানানোয় এবং যার ফল স্বরূপ উনার দেহ দু-টুকরো হওয়ার জন্য স্বরভানু বলেছিলেন যে সুযোগ পেলেই সূর্য এবং চন্দ্রের গায়ে গ্রহণ লাগাবেন ।যেটা আজও চলছে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ নামে ।আধুনিক সভ্যতা হয়তো বা এইকথাকে মানতে চাইবে না ।কিন্তু প্রত্যেক সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময়ে গ্রহের অবস্থান যদি লক্ষ্য করেন,তাহলে দেখবেন যে সূর্য গ্রহণের সময় সূর্য হয়তো কেতুর একদম ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে,নয়তো রাহুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে এবং চন্দ্রগ্রহণের সময় চন্দ্র,রাহু বা কেতুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে ।এককথায় সূর্য এবং চন্দ্র রাহু, কেতুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে এলেই সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণ শুরু হয়।
কুণ্ডুলী চক্রে রাহু-কেতুর নিজস্ব কোন ঘর নেই । রাহুকে কুম্ভ রাশির সহ অধিপতি এবং কেতুকে বৃশ্চিক রাশির সহ অধিপতি হিসাবে দেখা হয় ।অনেকে বৃষ রাশিকে রাহুর উচ্চ্স্থ ঘর আবার অনেকে মিথুন রাশিকে এবং অনেকে বৃশ্চিক রাশিকে কেতুর উচ্চ্স্থ ঘর আবার অনেকে ধনু রাশিকে কেতুর উচ্চস্থ ঘর মানেন ।
জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহু আর কেতুর মধ্যে কেতুকে আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত করে দেখা হয় । কেতুকে মোক্ষের কারক গ্রহ হিসাবে মানা হয় ।আমরা যদি নিজেকে আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত করতে চাই,তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শৃঙ্খলা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,ধর্ম, ন্যায়-নীতির পালন করতে হয়। তবেই ভগবানের সাথে যুক্ত হওয়া যায় বা ভগবানের সংস্পর্শে যাওয়া যায়।কেতু হলেন ভগবানের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম । কেতুর সাথে যুক্ত হতে হলে উপরিউক্ত বিষয়গুলি পূর্ণরূপে পালন করতে হয় ।
কুণ্ডুলীর যে ঘরে কেতু অবস্থান করেন,কুণ্ডুলী ধারকের সেই ঘরের বিষয়াদি নিয়ে সর্বদা ধর্ম, ন্যায়-নীতির পালন করতে হয় ।শৃঙ্খলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হয় ।
যদি সপ্তম ঘরে কেতু অবস্থান করেন,তাহলে সপ্তম ঘরের কর্ম ক্ষেত্রে তথা বিবাহিত জীবনের কর্ম বা দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেক লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদা ধর্ম,ন্যায়-নীতি,শৃঙ্খলা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে কর্ম করতে হয় ।
আর যদি উপরিউক্ত বিষয়গুলি মেনে চলা না যায়,তাহলে বিবাহিত জীবনে দেখা দেয় নানান সমস্যা,মনোমালিন্য । যদি সপ্তম ঘর বা সপ্তম ঘরের অধিপতি বা বিবাহ কারক ,গুরু,শুক্র অধিক অশুভ প্রভাব যুক্ত হন বা সপ্তম ঘরে কেতু শুভ অবস্থায় না থাকেন,তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনাও দেখা যায় ।
যদি কেতু সপ্তম ঘরে অবস্থান করেন এবং বিবাহিত জীবন নিয়ে বেশী সমস্যা দেখা দেয়,তাহলে আমিষ জাতীয় খাবার,নেশা জাতীয় খাবার ত্যাগ করা এবং নিরামিষ ভোজন করা শুভ ফলদায়ী হয় ।
অতএব সপ্তম ঘরে কেতু অবস্থান রত কুণ্ডুলী ধারকেরা সর্বদা কেতুর কারকতত্ত্বগুলির সাথে যুক্ত হয়ে চলুন । কেতুর আশীর্বাদে আপনার বিবাহিত জীবন চলবে সুন্দর ও মসৃণভাবে ।
- আরো পড়ুন
- সপ্তম ঘরে মঙ্গলের অবস্থান ও শুভফল প্রাপ্তির উপায়
- লগ্ন ও রাশিতে গুরুর অবস্থান ও শুভ ফল বৃদ্ধির উপায়
- লগ্ন বা রাশিতে সূর্যের অবস্থান এবং শুভ ফল বৃদ্ধির উপায়
- ভাগ্য পরিবর্তনের সময় যখন আসে জীবনে
- সপ্তম ঘরে শনির অবস্থান ও শুভফল লাভের উপায়
- লগ্নে ও রাশিতে কেতুর অবস্থান ও শুভফল লাভের উপায়
- সপ্তম ঘরে সূর্যের অবস্থান ও শুভফল বৃদ্ধির উপায়
- সপ্তম ঘরে গুরুর অবস্থান ও শুভফল লাভের উপায়
- রাহুর দশায় শুভফল পাওয়ার উপায়
- চতুর্থ ঘরে গুরুর অবস্থান ও শুভফল লাভের উপায়
- চতুর্থ ঘরে শনির অবস্থান ও শুভফল প্রাপ্তির উপায়
Comments
Post a Comment